★★Spoiler Alert★★
ভালো মুভি তো জীবনে অনেক দেখেছি। তবে বহুদিন থেকেই ইচ্ছা ছিল ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি জগতের সবচেয়ে বিতর্কিত ও আপত্তিকর মুভিগুলো দেখার। কিন্তু সাহস করতে পারি নি, বারবার ভয় হচ্ছিল যদি পাগল-টাগল হয়ে যাই!! সে যাই মনে হোক, শেষমেষ সাহস করে ডাউনলোড দিয়ে দেখা শুরু করলাম এমনই কিছু মুভি। যতদিন ধরে এই মুভিগুলো দেখেছি, মনের মধ্যে সবসময় একটা অস্বস্তি কাজ করেছে। রাতে ঘুমাতেও সমস্যা হয়েছে কিছুটা। সৌভাগ্যবশত মানসিক কোনো সমস্যা বোধ করি নি। তবে হার্ট দূর্বল মানুষদের জন্য রইল তীব্র সতর্কতাবাণী।
⚠⚠Extreme 18+ Warning⚠⚠
- A Serbian Film (2010)
মুভিটিকে দেখার পর প্রথমেই মনে হয়েছে, এই মুভিটি সেন্সর বোর্ড পাস করল কীভাবে!! এটাই আমার জীবনে দেখা সবচেয়ে নিকৃষ্ট কাহিনীর মুভি। মুভির কাহিনী মিলোস নামের এক প্রাক্তন পুরুষ পর্নস্টারকে নিয়ে, যিনি প্রাতিষ্ঠানিকভাবে তার ক্যারিয়ার হতে অব্যহতি নেয়ার জন্য এক প্রস্তাবে রাজি হয়ে যান। প্রস্তাবদাতা তাকে জানায় যে তারা একটি সিক্রেট অর্গানাইজেশনের জন্য পর্ন ভিডিও বানায়। পরে মিলোস ধীরে ধীরে জানতে পারে যে তারা যেসব পর্নের শ্যুটিং করে, সেগুলো মূলত নীতিবহির্ভূত ও রাষ্ট্রীয়ভাবে অনৈতিক পর্ন ভিডিও অর্থাৎ চাইল্ড পর্ন, স্নাফ ফিল্ম প্রভৃতি। সমগ্র মুভিতে বেশ কয়েকটি ধর্ষণ ও তীব্র অ্যাডাল্ট দৃশ্য রয়েছে, যেগুলোর কিছু কিছু অপ্রাপ্তবয়ষ্ক শিশু সম্পর্কিত। মুভিটির জঘন্যতম দৃশ্যটি ছিল এক সদ্য নবজাতক শিশুকে ধর্ষণ করার ভিডিও, যেটা হজম করা যেন জীবনের কঠিন কাজগুলোর মধ্যে একটা ছিল। মুভির এই দৃশ্যটি নিয়ে ক্যাথোলিক চার্চ কমপ্লেইন করেছিল, যদিও শেষপর্যন্ত ব্যাপারটা নিয়ে আর জলঘোলা হয় নি।
- Salò, or the 120 Days of Sodom (1975)
পিয়ের পাওলো প্যাসোলিনি ছিলেন তৎকালীন সময়ের ইতালির সবচেয়ে বিতর্কিত মুভি পরিচালক। তার এই বিতর্কিত জীবনে মৃত্যুর হুমকিও কম আসেনি এবং শেষ পর্যন্ত এক আততায়ীর হাতেই তার জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটে। মুভিটির কাহিনী দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে নাৎসি বাহিনীর এক ফ্যাসিস্ট গ্রুপ কর্তৃক কিছু তরুণ-তরুণীকে অকথ্য নির্যাতন করার ঘটনা নিয়ে। মুভিটি দেখার সময় সেসব ফ্যাসিস্ট গ্রুপে সদস্যদেরকে যেন পশুর চেয়েও নিচ বলে মনে হবে। পুরো মুভিতে অসংখ্য অসহনীয় শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের দৃশ্য রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে জিহবা কেটে ফেলা, চোখ তুলে নেয়া, যৌনাঙ্গে জ্বলন্ত মোমবাতি ধরা প্রভৃতি। মুভিটির সবচেয়ে কুরুচিপূর্ণ ঘটনাটি ছিল মল ভক্ষণের দৃশ্য। মুভিটিতে এক ডিনারে মেন্যু হিসেবে সবাইকে মল সার্ভ করা হয়। দীর্ঘক্ষণ ধরে চলতে থাকা এই দৃশ্যটি দেখা যেন নিজের বমি হওয়াকে আটকিয়ে রাখার মত ব্যাপার।
- Martyrs (2008)
অত্যধিক রক্তপাত ও সহিংস দৃশ্যাবলির দিক থেকে চিন্তা করলে এই মুভি যেন কুয়েন্টিল ট্যারান্টিনোর মুভিকেও হার মানাবে। মুভির কাহিনীতে এক গুপ্ত সংস্থা বিশ্বাস করে যে মানুষকে তীব্র নির্যাতন চালাতে থাকলে সে একসময় দৈবচক্ষু প্রাপ্ত হয়ে মৃত্যুর পরবর্তী জগৎকে দেখতে পাবে। এইধরণের মানুষদেরকে মুভিতে বলা হয় “Martyr”. পরলোক সম্বন্ধে যাবার আসায় তারা বহু মানুষকে বদ্ধ ঘরে রেখে নির্যাতন চালাতে থাকে। লুসি নামের এক ছোট মেয়ে সেখান থেকে পালিয়ে আসে ও পরবর্তীতে অ্যানা নামের আরেকটি মেয়ের সঙ্গে তার বন্ধুত্ব হয়। ঘটনাক্রমে লুসি আত্মহত্যা করে ও অ্যানা সেই গুপ্ত সংস্থার হাতে পরে যায়। মুভিতে দেখানো নির্যাতন, রক্তপাত ও সহিংসতার দৃশ্যগুলো এতটাই তীব্র, যে স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকাই অনেক কষ্টকর ব্যাপার। মুভির এক দৃশ্যে অ্যানাকে জীবন্ত রেখে সার্জারি করে তার পুরো শরীরের চামড়া তুলে নেয়া হয়, যে নির্যাতনকে মধ্যযুগের ভাষায় “Flaying” বলা হত। চামড়া তুলে নেয়ার পর অ্যানার শরীরের অবস্থা মোটেও দেখার মত ছিল না।
- Cannibal Holocaust (1980)
মুভিটি বহু বছর পর্যন্ত টপ ডিস্টার্বিং মুভির লিস্টে শীর্ষে অবস্থান করছিল। পরবর্তীতে অনেক নতুন মুভি আসায় সে রেকর্ড আর ধরে রাখা সম্ভব হয় নি। মুভিটির কাহিনী একদল অভিযাত্রীর আমাজন রেইনফরেস্টে এক মানুষখেকো উপজাতির সঙ্গে কাটানো কিছু মুহূর্তকে নিয়ে। মুভিতে প্রচুর প্রাণী হত্যার দৃশ্য রয়েছে, যা সম্পূর্ণ বাস্তব এবং কোনো কম্পিউটার জেনারেটেড ইমেজিংয়ের সাহায্য নেয়া হয় নি দৃশ্যগুলির নির্মাণে। মুভিটিকে অনেক সময় স্নাফ ফিল্ম হিসেবেও বিবেচনা করা হয়। অনেকেই ধারণা করেন যে মুভিটিতে দেখানো মানুষ হত্যার দৃশ্যগুলোও বাস্তব ছিল। যদিও পরবর্তীতে সেটা নিয়ে পরিচালকের বিরুদ্ধে মামলা করা হলেও তা প্রমাণিত হয় নি। মুভিটির সবচেয়ে বিতর্কিত দৃশ্যটি ছিল এক নারীর উলঙ্গ লাশের দৃশ্য, যেখানে তার মলদ্বারের মধ্য দিয়ে একটি বাঁশ ঢুকিয়ে মুখ দিয়ে বের করে সেই বাঁশটির সঙ্গে তাকে ঝুলিয়ে রাখা হয়। বেশিরভাগ ক্রিটিকই এই দৃশ্যটি দেখার পর সেটাকে গ্রাফিক্যাল বলে বিশ্বাসই করতে পারেন নি।
- The Human Centipede II (2011)
টম সিক্স পরিচালিত “The Human Centipede Trilogy” ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি জগতের সবচেয়ে ন্যাক্কারজনক মুভি সিরিজগুলোর একটি। মুভি সিরিজটি একে যেমন ডিস্টার্বিং, তেমনি এর কাহিনীও জঘন্য৷ সিরিজটির প্রথম অংশে একটি জঘন্য ধারণার প্রবর্তনা ও শেষ অংশটিকে কিছুটা কমেডিরূপে তৈরি করা হলেও দ্বিতীয় পার্টটি কুখ্যাত ডিস্টার্বিং মুভিগুলোর মধ্যে এক অন্যতম জায়গা দখল করে আছে৷ মুভিটিতে একে যেমন অ্যানেস্থেসিয়া ছাড়া বহু কাটাকাটি ও রক্তপাতের দৃশ্য রয়েছে, তেমনি আরো বহু কুরুচিপূর্ণ ঘটনা উঠে এসেছে মুভিটিতে৷ মুভির এক দৃশ্যে এক বাবা তার বাচ্চাকে ধর্ষণ করে, যা অনেক আপত্তিকর একটি ব্যাপার ছিল। মুভিটির একটি অতি জঘন্য ঘটনা ছিল, যেখানে এক লোক শিরীষ কাগজ ব্যবহার করে হস্তমৈথুন করে। এই দৃশ্যটি ছিল যেন স্বাভাবিক মস্তিষ্কের চিন্তা-ভাবনার উর্ধ্বে, যা অনেক সময় ভাবতেই কষ্ট হয়।
- Antichrist (2009)
লারস ভন ট্রায়ারকে ইউরোপের সবচেয়ে সাহসী মুভি পরিচালক হিসেবে দাবী করা হয়ে থাকে। এটিই ছিল তার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বেশি বিতর্কিত মুভি। ট্রায়ারকে মূলত মুভিতে অতিরিক্ত খোলামেলা দৃশ্য ব্যবহার জন্যই দর্শক ও ক্রিটিকদের কাছে বহুল বিতর্কিত হতে হয়েছে। তার জীবনের অন্যতম ফিল্ম সিরিজটি ছিল “The Depression Trilogy”, যার শেষ পার্ট ছিল এই মুভিটি। এই মুভিটি যতটা না ডিস্টার্বিং, তার চেয়ে বেশি বিতর্কিত। মুভির কাহিনীতে মূলত প্রদর্শন করা হয়েছে ছেলে হারানো এক বাবা-মায়ের হতাশাগ্রস্ত জীবনকে। মুভিতে প্রতীকীরূপে কিছু পশু সম্পর্কিত সহিংসতার দৃশ্য দেখানো হয়েছে, যার একটিতে এক শেয়াল তার নিজের শরীরের ভেতরের অঙ্গ খেয়ে ফেলে। এসব দৃশ্যে স্পষ্টতই হাই গ্রাফিক্সের ব্যবহার হয়েছে। মুভির সবচেয়ে অসহনীয় দৃশ্যটিতে সেই সন্তানহারা মা তার যৌনাঙ্গের “ক্লিটোরিস” অংশটি কাঁচি দিয়ে কেটে ফেলে ও তার ফলে রক্তপাত ঘটে, যে দৃশ্যটি সম্পূর্ণ অনস্ক্রিন দেখানো হয়। এছাড়াও শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের বিষয়টিও বেশ ব্যাপকভাবে ফুটে উঠেছে মুভিটিতে।